মজার প্রশ্ন, সহজ উত্তর: রসায়ন

–  এটা আবার কী রকম প্রশ্ন হলো? মনে হতে পারে আমরা তো কতকিছুই ছুঁয়ে ফেলছি প্রতিদিন। হাতে কলম নিয়ে লিখছি। তুমি হয়তো হাতে নিয়ে বইটি পড়ছো, টিভির রিমোটে জোরে চাপ দিয়ে চ্যানেল পাল্টে দিচ্ছো। তবে এগুলো কি ছোঁয়ার মধ্যে পড়ে না? তোমার ধারণা ভুল নয়, তবে এখানে আরেকটু জানার আছে। আমরা জানি প্রত্যেক বস্তু অসংখ্য ক্ষুদ্র পরমাণু দ্বারা তৈরি। যদি প্রশ্ন করা হয়, যখন দু’টি বস্তু একটা আরেকটাকে ছোঁয়, তখন কি দু’টি বস্তুর পরমাণুগুলোও একটা আরেকটাকে ছোঁয়া দেয়

উত্তর হলো ‘না’। তুমি যখন দু’টি আঙ্গুল খুব জোরে চাপ দিয়ে ধরেছ, অণু-পরমাণুর লেভেলে এরা একটা আরেকটার সংস্পর্শে আসছে না। এখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা থেকে যাচ্ছে। তুমি যখন চেয়ারে বসে আছো তখনো কিন্তু চেয়ারের পরমাণু তোমার শরীরের পরমাণুকে একেবারে ছুঁয়ে ফেলছে না।

তার মানে কী? তুমি কিন্তু আসলে চেয়ারের উপর ভেসে আছো। কিন্তু চেয়ার আর তোমার মধ্যকার শূন্যস্থান এতই ছোট যে তুমি সেটা দেখতে পারবে না। এর কারণ মূলত পরমাণুর চারদিকে যে ইলেক্ট্রন ঘুরতে থাকে তা একটা আরেকটাকে বিকর্ষণ করে। এজন্যই খালি স্থানের তৈরি হয়। সেই খালি জায়গা আমরা অনুভব করতে পারি না, কারণ আমরা কিন্তু সেই বিকর্ষণ বলটা অনুভব করছি। বিকর্ষণ বলের জন্যই শক্ত করে পেন্সিল আঁকড়ে ধরলে আঙ্গুল ব্যথা করবে যদিও আসলে তুমি ওটা ছোঁওনি।

–  কেরোসিনের কোনো রং নেই। বিশুদ্ধ কেরোসিন পুরোপুরি রংহীন হয়। আরেকটি খুব বিপজ্জনক পদার্থ আছে, যার নাম গ্যাসোলিন। গ্যাসোলিন একটি দাহ্যপদার্থ, অর্থাৎ এটি আগুনে জ্বলে। গ্যাসোলিন ও কেরোসিন উভয়ই বর্ণহীন হওয়ায় এদের একসাথে রাখলে যেকোনো সময় সমস্যায় পড়তে হবে বুঝতেই পারছ! কোন পাত্রে কেরোসিন আর কোন পাত্রে গ্যাসোলিন সেটা বুঝতে যেন প্যাঁচ না লাগে তাই কেরোসিনের রঙ করে  দেয়া হলো নীল।

–  আমরা চোখে যা কিছু দেখি সবকিছুই পরমাণু দিয়ে তৈরি। নিচে পরমাণুর একটি ছবি দেখলে বুঝতে পারবে। এর চারদিকে তিনটি ইলেক্ট্রন ঘুরছে। আর এর মাঝখানে যে পিণ্ড আছে সেটার নাম নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াসে আছে প্রোটন ও নিউট্রন। ইলেক্ট্রন, প্রোটন, অথবা গোটা একটি পরমাণু যদি হাতে ধরা যেত তবে মুহূর্তের মধ্যেই পরীক্ষাটি তোমরা করে ফেলতে পারতে। সে সুযোগ এখানে যেহেতু নেই, সুতরাং আমাদের বিজ্ঞানীদের গবেষণা থেকে আহরিত কিছু জ্ঞান ধার করতে হবে। 

পরমাণুতে থাকে ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন। প্রোটন ও নিউট্রন মাঝখানে জোট বেঁধে থাকে আর ইলেক্ট্রন তাদের প্রদক্ষিণ করে ক্রমাগত ঘুরে। একটি সাধারণ হাইড্রোজেন পরমাণুর কেন্দ্রে শুধু প্রোটন থাকে, নিউট্রন থাকে না। আর ইলেক্ট্রন প্রোটনটিকে ঘিরেই ঘুরতে থাকে। নিচের ছবিটি দেখো

মনে করলাম আমাদের হাতে আলাদাভাবে একটি প্রোটন ও একটি ইলেক্ট্রন আছে। এখন ইলেক্ট্রনটিকে যদি প্রোটনের উপর ছেড়ে দেই তাহলে কী ঘটবে?

        এখানে তিনটি সম্ভাব্য ঘটনা ঘটতে পারে:

        ১. খুব জোরে আঘাত করলে বাউন্স করে প্রোটন থেকে দূরে সরে যেতে পারে।

        ২.  প্রোটন ইলেক্ট্রনটিকে আকর্ষণ করে শুষে নিয়ে একটি নিউট্রনে পরিণত হতে পারে ।

        ৩. একটি হাইড্রোজেন পরমাণু গঠিত হতে পারে।

–  কিছুদিন আগে আবিষ্কৃত হওয়া ১১৭ পারমাণবিক সংখ্যা বিশিষ্ট Tennessine (Ts)  হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী ধাতু। একটি লেড পরমাণুর তুলনায় একটি Tennessine পরমাণু ৪০% অধিক ভারী। আর এটি লোহার তুলনায় ৫ গুণ বেশি ভারী।

– টিকটিকি এবং অনেক পোকামাকড় দেয়ালে আটকে থাকে। তাদের প্রতি ঈর্ষা হয়েছে কখনো? দেয়াল বেয়ে হাঁটতে পারলে তুমিও হয়ে যেতে পারতে স্পাইডারম্যান। টিকটিকির পায়ের তলায় থাকে হাজার হাজার সূক্ষ্ম চুল।

বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপের তলায় নিয়ে দেখেছেন সেগুলো দেখতে অনেকটা আমাদের টুথব্রাশের ব্রিসলের মতো।

এ ছোট চুলগুলো হলো বিভিন্ন কার্বন যৌগের তৈরি। এটি যখন কোনো বস্তুর সংস্পর্শে আসে প্রতিটি সূক্ষ্ম চুল ও বস্তুর অণুদের মধ্যে দুর্বল ভ্যান্ডারওয়ালস বল কাজ করে। মিলিয়ন মিলিয়ন চুলের মিলিত ভ্যান্ডারওয়ালস বল টিকটিকির ওজন ধরে রাখবার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী। এজন্য টিকটিকি দিব্যি দেয়ালে হেঁটে বেড়াতে পারে। স্পাইডারম্যান মুভির কথা মনে আছে? পিটার পার্কারকে একদিন মাকড়সা কামড়ে দিল। তারপর থেকে তার দেহে পরিবর্তন হওয়া শুরু করল। সে পেয়ে গেল সুপার পাওয়ার তাকে যা স্পাইডারম্যান করে তুলল। মুভির এক দৃশ্যে প্রথম দেয়াল বেয়ে উঠার সময়  স্পাইডারম্যানের হাত থেকেও এরকম কাঁটার মতো লোম বের হয়েছিল।

–  হ্যাঁ, সুখ দুঃখের অনুভূতি সৃষ্টিতেও রয়েছে রসায়নের হাত। আমাদের দেহনিঃসৃত বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থই মূলত এসব অনুভূতির কারণ। সুখের জন্য যে উপাদানগুলো দায়ী সেগুলো হলো :

        – Seratonin

        – Dopamine

        – Norepinephrine.

সুখের রেসিপি তো দিয়ে দিলাম। এখন এ রেসিপি দেখে দেখে তৈরি করে ফেলো “The solution of happiness” আর এ Happiness বিলিয়ে দাও সবার মাঝে।

– কোনো পরমাণুর ভিতর ইলেক্ট্রন, প্রোটন যদি তাদের বিপরীত আধান ধারণ করে তাহলে তাদের এন্টি পার্টিকেল বলে। এরকম এন্টি পার্টিকেল দিয়ে তৈরি পদার্থের নাম এন্টিম্যাটার। সাধারণ অবস্থায় ইলেক্ট্রনের চার্জ নেগেটিভ প্রোটনের চার্জ পজিটিভ হলেও এন্টিম্যাটারে এদের চার্জ হবে যথাক্রমে পজিটিভ ও নেগেটিভ। অর্থাৎ পুরোপুরি বিপরীত। নিচের ছবিতে একটি এন্টিহাইড্রোজেন পরমাণুর ছবি দেয়া আছে। এন্টিহাইড্রোজেন পরমাণুটি যদি সাধারণ হাইড্রোজেন পরমাণুর সংস্পর্শে আসে তাহলে দুটিই ধ্বংস হয়ে যাবে। জাফর ইকবাল স্যারের অক্টোপাসের চোখ বইটিতে প্রতিপদার্থের নাম শুনেছ না? এই এন্টিম্যাটারকেই বাংলাতে বলা হয় প্রতিপদার্থ। সাধারণ পদার্থ আর প্রতিপদার্থ পরস্পরের কাছাকাছি আসলে ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটবে এবং শক্তি উৎপন্ন হবে।

– বাকমিনস্টার ফুলারিন হলো ৬০টি কার্বন পরমাণু বিশিষ্ট এক বৃহদাকার অণু। এ অণু সম্পর্কে বলার মতো সব থেকে সুন্দর বিষয়টি হলো এটি দেখতে ফুটবলের মতো। দেখতে খুবই আকর্ষণীয় ও যেকোনো ফুটবলপ্রেমীর জন্য লোভনীয় বটে। তবে ফুটবলের সাথে একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য হলো এই যে, এখানে ষড়ভুজের পাশাপাশি কিছু পঞ্চভুজও আছে। মোট বিশটি ষড়ভুজ ও বারোটি পঞ্চভুজ দিয়ে এ অনিন্দ্যসুন্দর অণুুটি গঠিত। প্রত্যেক ভুজের শীর্ষবিন্দুতে একটি করে কার্বন পরমাণু বিদ্যমান।

যদি মনে করো এটি কেবল সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত তাহলে ভুল করবে। শুধু সৌন্দর্য একে নোবেল পুরস্কার এনে দেয়নি। এটি প্রথম তৈরি করা হয় ১৯৮৬ সালে, আমেরিকার রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৬ সালে এর আবিষ্কারকগণ নোবেল পুরস্কার পান। এ অণুুর নামটি দেয়া হয় স্থপতি বাকমিনস্টার ফুলারের নামে। কারণ এটি দেখতে তার তৈরি করা একটি ডিজাইনের মতো।

কিন্তু এটি আবিষ্কারে তার কোনো অবদান নেই। বিজ্ঞানীরা মূলত গবেষণা করেছিলেন বায়ুশূন্য অবস্থায় অতি উচ্চতাপে গ্রাফাইটের (কার্বনের আরেক রূপ) ধর্ম নিয়ে। কিন্তু তারা যখন এর উপর প্রায় ১০০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার লেজার রশ্মি ফেলেন, তারা অবাক হয়ে খেয়াল করেন যে উৎপন্ন পদার্থটি ৬০টি কার্বন পরমাণু বিশিষ্ট অনেকগুলো অণুর সমষ্টি।

– রাবার পলিমার অণু দ্বারা গঠিত। অর্থাৎ অণুগুলো একটার সাথে আরেকটা যুক্ত হয়ে লম্বা শিকল গঠন করে। শিকলগুলো সাধারণ অবস্থায় গুটানো থাকে। তখন এরা সংকুচিত থাকে। যখন রাবারের দুই প্রান্তে টান দেয়া হয় তখন অণুগুলো দুই দিক বরাবর সোজা টানটান অবস্থায় থাকে শক্ত দড়ির মতো। এ অবস্থার পর রাবার টানলে আর লম্বা হবে না, কিন্তু ছেড়ে দিলে আগের মতো অবস্থায় ফিরে যাবে।

চেইনগুলোর মধ্যে স্থিতিস্থাপক বল বিদ্যমান থাকার ফলে ছেড়ে দিলে অণুুগলির শিকল আবার আগের মতো অবস্থায় ফিরে যায়। আবার পূর্বের মতো এলোমেলো সংকুচিতভাবে অবস্থান নেয়। অনেক পলিমার দ্রব্য শক্ত থাকে। কারণ তাদের অণুতে অসংখ্য পরমাণু থাকলেও সেগুলো এরকম পেঁচানো দড়ির মতো অবস্থান করে না। ফলে সেগুলো টানলেও লম্বা হয় না।              

[স্থিতিস্থাপক বল: যে বল কাজ শেষে বস্তুকে পূর্বের অবস্থানে নিয়ে যায়। যেমন, স্প্রিং টেনে ছেড়ে দিলে তা আগের মতো সংকুচিত হয়ে যায়। পেন্সিলের দাগ মোছার  ইরেজার চাপ দিলে ছোট হয়। চাপ সরিয়ে নিলে পূর্বের আকারে ফিরে যায়]

– আমরা এসিড সম্পর্কে শুনেছি। জানি এটা অন্যান্য কঠিন পদার্থকে গলিয়ে ফেলে। অনেক সময়ে পেশাদার কিছু চোর চুরির জন্য তালা না ভেঙে এসিড দিয়ে তালা গলিয়ে ফেলে। তো এসিড এরকম ভয়ঙ্কর বৈশিষ্ট্য কীভাবে পেল?

এসিডের মধ্যে সবসময় হাইড্রোজেন থাকে। যেমন: HCI- হাইড্রোক্লোরিক এসিড, H2SO4 – সালফিউরিক এসিড। বেশিরভাগ ধাতু হাইড্রোজেন পরমাণুর চেয়ে বেশি সক্রিয়। এ কথাটির অর্থ হলো ধাতুর পরমাণু এসিডের হাইড্রোজেন পরমাণুকে সরিয়ে নিজেই হাইড্রোজেনের স্থানে বসে। ফলে ধাতুটির টুকরো থেকে পরমাণুর সংখ্যা কমতে থাকে। এ কারণেই এসিডের সংস্পর্শে আসলে ধাতুর ক্ষয় হয়।

– কাচ অক্সিজেন ও সিলিকন দ্বারা গঠিত পদার্থ। রাসায়নিকভাবে কাচকে লেখা হয় SiO2। কাচ একটি সমযোজী বন্ধনে গঠিত যৌগ হলেও এর দৃঢ়তা খুব বেশি। (অধাতু ও অধাতু মিলে যৌগ গঠন করলে সেটা সমযোজী যৌগ হয়। এখানে Si  ও O2 দুটিই অধাতু) তাই বেশিরভাগ এসিড কাচের পাত্র গলাতে পারে না। কিন্তু হাইড্রোফ্লুরিক এসিড(HF)কাচ গলাতে  সক্ষম।

– যদি কোকাকোলার বোতলের গায়ের ইনগ্রেডিয়েন্ডস বা উপাদানসমূহ পড়ে দেখ তাহলে দেখবে :

 ১. কার্বনেটেড পানি, ২. অধিক ফুক্ট্রোজ চিনিযুক্ত কর্ন সিরাপ, ৩. ক্যারামেল রং, ৪. প্রাকৃতিক ফ্লেভার, ৫. ক্যাফেইন ইত্যাদি। এখানে বলে রাখা ভালো কোকাকোলা লেখা এসব সাধারণ উপাদানের সঙ্গে আরো কিছু গোপন ফর্মুলা মেশায়, যা তারা কখনো প্রকাশ করবে না। তবে সাধারণ চিন্তা ভাবনা থেকে ধরে নেয়া যায় যে, এ কালচে বাদামি রং এসেছে বাদামি রঙের ক্যারামেল মেশানোর ফলে। স্প্রাইটের বোতলের উপাদান পড়ে দেখলে দেখবে সেখানে ক্যারামেল মেশোনো হয়নি। এজন্য স্প্রাইটের রং স্বচ্ছ হয়।

– তোমরা হয়তো কোথাও শুনে থাকবে হীরা পৃথিবীর সব থেকে শক্ত পদার্থ। কিন্তু নিউসায়েন্টিস্ট ম্যাগাজিন বলছে মানব তৈরিকৃত ক্ষুদ্র ন্যানোম্যাটেরিয়ালের কাছে হীরা তার শক্ত হবার চ্যাম্পিয়নশিপ হারিয়েছে। তবে শুধু ন্যানোম্যাটেরিয়াল নয়, হীরার চেয়ে শক্ত আরো পদার্থ আছে। সবচেয়ে শক্ত পদার্থগুলোর একটি ক্রম হলো:

১. উর্টজাইট বোরন নাইট্রাইড

২. লোন্সডালেইট

৩. হীরা

 ৪. বোরাজোন

৫. বোরন কার্বাইড

৬. রেনিয়াম ডাইবারাইড  

৭. টাইটানিয়াম ডাইবারাইড

 ৮. টাইটানিয়াম কার্বাইড

৯. জার্কোনিয়াম কার্বাইড

১০. অ্যালুমিনা    

– আসলে স্কচটেপের লেগে থাকার কারণ রাসায়নিক নয় বরং ভৌত। স্কচটেপ তৈরি হয় তরলের বিশেষ ধর্মকে কাজে লাগিয়ে। ধর্মগুলো হচ্ছে সংশক্তি ও আসঞ্জক বল । সংশক্তি হলো সংযোগ শক্তি। কোনো তরলের অণুসমূহের একসাথে লেগে থাকাকে বোঝায়। পানি নিজে পরস্পরের সাথে লেগে থাকে।

যেমন পানির ফোঁটার কথাই ধরো! তুমি চাইলে ফোঁটাকে দুইভাগ করে দিতে পারো কোনো চামচ ব্যবহার করে। আবার দু’টি ছোট ফোঁটা একত্র করে একটি বড় ফোটাও তৈরি করতে পারো। পানির দু’টি ফোঁটার একসাথে লেগে থাকার কারণ হচ্ছে সংশক্তি। অন্যদিকে দেয়ালে পানি ছুঁড়ে মারলে সেটি দেয়ালের গায়ে লেগে থাকে ও আস্তে আস্তে গড়িয়ে পড়ে। দেয়ালে লেগে থাকার জন্য যে বল দায়ী  তার নাম আসঞ্জক বল।

একই বৈশিষ্ট্য আমরা জেলির ক্ষেত্রেও দেখি। পাউরুটির একপাশে জেলি লাগিয়ে ভাজ করে দিলে তা অন্যপাশেও লেগে থাকে। এই ঘটনাটি কিন্তু জেলির মধ্যকার আসঞ্জক বল ও সংশক্তি এই দু’টি বলের কারণেই ঘটেছে। আসঞ্জক বলের জন্য পানি দেয়ালের সাথে লেগে ছিল, আর সংশক্তি বলের জন্য পানির কণাগুলো নিজেদের মধ্যে জোড়া লেগে ছিল। আঠাকে বলা যায় উচ্চ আসঞ্জক ও সংশক্তি  বিশিষ্ট পদার্থ। সংশক্তি বল না থাকলে আঠা পরস্পরের সাথে লেগে থাকত না, ফলে আমরা কোনো কিছু জোড়া লাগাতে পারতাম না।

ছবিটি দেখলে তোমার কাছে পরিষ্কার হবে কেন আসঞ্জক ও সংশক্তি দুই ধরনের বলের প্রয়োজন আছে।

– আমাদের শরীর মূলত খাবার হজম ও অন্যান্য কাজে এসিডের উপাদান কাজে লাগায় এবং এগুলোর মধ্যে কিছু খুব তীব্র এসিড। যেমন-

হাইড্রোক্লোরিক এসিড:

আমাদের পাকস্থলির ভিতরে তৈরি হয় হাইড্রোক্লোরিক এসিড। তবে আমাদের পাকস্থলির ত্বকের কোনো ক্ষতি করতে পারে না এটি। হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাবারকে আরো ছোট ছোট টুকরায় ভাগ করে।

 ল্যাকটিক এসিড:

মানুষ ও প্রাণীদের শরীরে ল্যাকটিক এসিড পাওয়া যায়। যখন শক্তি উৎপন্ন করার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাওয়া না যায় তখন ল্যাকটিক এসিড শক্তি তৈরিতে সাহায্য করে।

DNA:

DNA–এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ”Deoxyribonucleic acid”. এর মধ্যে জেনেটিক কোড থাকে যার কারণে বংশাণুক্রমে উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৈশিষ্ট্য একই থাকে। এ কারণেই সন্তানের মধ্যে বাবা-মায়ের গুণাবলি বিদ্যমান থাকে। বলা যায় পুরো একটি সংবিধানের মতো। তোমার চামড়ার রং, দেহে কী কী প্রোটিন  তৈরি হবে, তুমি কি ছেলে নাকি মেয়ে সব বলে দেয়া আছে এতে।

RNA :

RNA (ribonucleic acid) ডিএনএ কে রক্ষা করে এবং প্রোটিন তৈরিতে সহায়তা করে।

এমিনো এসিড:

মানবদেহে ২০টির মতো অ্যামিনো এসিড উৎপন্ন হয় যার মধ্যে ১০টি না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না।

ফ্যাটি এসিড:

অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা ফ্যাট শরীরের জন্য খারাপ হলেও একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফ্যাটি এসিড শরীরে থাকতেই হবে। আমাদের কোষের ভিতরে কোষের অন্যান্য উপাদানকে পানি থেকে আলাদা করে রাখে ফ্যাটি এসিড। তেল ও চর্বি জাতীয় খাবারের মাধ্যমে ফ্যাটি এসিড শরীরে জমা হয়।

📌 সর্বশেষ ৫ টি ব্লগ পড়ুন:

Scroll to Top