কোষের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ (Definition and types of Cell)

বিজ্ঞানী Robert Hooke ছিপির একটি পাতলা সেকশন করে অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করলেন। তিনি সেখানে মৌমাছির চাকের ন্যায় অসংখ্য ছোট ছোট কিঠুরী বা প্রকোষ্ঠ (Little Box) দেখতে পেলেন। এ থেকেই ছিপির Little Box-গুলোকে তিনি নাম দেন Cell বা প্রকোষ্ঠ। Cell শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ করা হয়েছে কোষ বা জীবকোষ। রবার্ট হুক প্রকৃতপক্ষে মৃত কোষ তথা কেবল প্রকোষ্ঠই দেখেছিলেন। পরে ডাচ বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ভ্যান লিউয়েনহুক প্রথমে ১৬৭৪ সালে কোষ প্রাচীর ছাড়াও ভেতরে পূর্ণাঙ্গ কোষীয় দ্রব্যসহ জীবিত কোষ পর্যবেক্ষণ করেন।

  • Jean Brachet (1961) এর মতে – ‘কোষ(Cell) হলো জীবের গঠনগত মৌলিক একক’।
  • Loewy and Siekevitz (1969) এর মতে – ‘কোষ হলো জৈবিক ক্রিয়াকলাপের একক যা একটি অর্ধভেদ্য ঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে এবং যা অন্য কোনো সজীব মাধ্যম ছাড়াই আত্ম-জননে সক্ষম’।
  • De Roberties (1979) এর মতে – ‘কোষ হলো জীবের মৌলিক গঠনগত ও কার্যগত একক।

Alexander Oparin এবং J.B.S. Haldane (1920) বলেন যে আদিকালের বায়ুমণ্ডলে মিথেন (𝐶𝐻4)(CH4​), অ্যামোনিয়া (𝑁𝐻3)(NH3​), হাইড্রোজেন (𝐻2)(H2​) এবং পানি (জলীয় বাষ্প, 𝐻2𝑂H2​O) ছিল কিন্তু মুক্ত 𝑂2O2​ ছিল না। এসব গ্যাসসমূহের পরস্পর ঘর্ষণের ফলে কোনো জৈব অণু সৃষ্টি হয়েছে।

অনেকেই মনে করেন আদি জীবন সম্ভবত সরল RNA ছিল, যা থেকে পরে প্রোটিন তৈরি হয়েছিল। এই ধারণা RNA-World হাইপোথেসিস নামে পরিচিত।

বিষয়টি দাঁড়ায় নিম্নরূপ :

(i) প্রথম কোষ অবশ্যই জড় উপাদান থেকে সৃষ্টি হয়েছিল।

(ii) লাইটেনিং-এর ফলে বায়ুমন্ডলে বিরাজমান 𝐶𝐻3,𝑁𝐻3,𝐻2𝑂ও𝐻2CH3​,NH3​,H2​OH2​ থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড সৃষ্টি হয়েছিল।

(iii) গভীর সমুদ্রে কার্বন যৌগ ও পলিমার সৃষ্টি হয়েছিল।

(iv) পরবর্তীতে ফসফোলিপিড বাইলেয়ার তৈরি হয়েছিল।

(v) RNA-এর মাধ্যমে বংশগতির ধারা প্রবাহ শুরু হয়েছিল।

(vi) আদি কোষের DNA পরবর্তীতে কোষঝিল্লি দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে প্রকৃত নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়েছিল।

সহজ কথায়, একটি কোষের মধ্যে অন্য একটি ছোট কোষ ঢুকে আশ্রয় নেয়। পরে সেই ছোট কোষটি আশ্রয়দাতা বড় কোষের একটি অংশ হয়ে যায়। আদি কোষ থেকে সৃষ্টি হয় প্রকৃত কোষ, সেই প্রকৃত কোষে একটি বায়বীয় ব্যাকটেরিয়া ঢুকে পড়ে। যা পরে মাইটোকন্ড্রিয়নে পরিণত হয় এবং সৃষ্টি হয় প্রকৃত প্রাণী কোষ।

সেই প্রাণী কোষে ঢুকে পড়ে ফটোসিনথেটিক ব্যাকটেরিয়াম যা পরে ক্লোরোপ্লাস্টে পরিণত হয় এবং সৃষ্টি হয় উদ্ভিদ কোষ। নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট একটি পোষক কোষে বায়বীয় ও ফটোসিনথেটিক ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে টিকে থাকার প্রক্রিয়াকে বলা হয় এন্ডোসিমবায়োসিস (Endosymbios)।

 

কোষকে একটা ইন্ডাস্ট্রি এর সাথে তুলনা করা যায়, বড় ইন্ডাস্ট্রি। সেই ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু মেশিন কিছু শক্তি তৈরি করে, আবার কিছু মেশিন হরেক রকম খাবার তৈরি করে, সেগুলোকে প্রসেস করে, প্যাকেজ করে আরো কত কী!

Cell Image

 

দেহকোষ (Somatic Cell) : জীবদেহের অঙ্গ ও অঙ্গতন্ত্র গঠনকারী কোষকে দেহকোষ বলে। উচ্চ শ্রেণির জীবদেহের দেহকোষে সাধারণত ডিপ্লয়েড সংখ্যক ক্রোমোসোম থাকে। উদাহরণ : মূল, কাণ্ড ও পাতার কোষ, স্নায়ু কোষ, রক্তকণিকা ইত্যাদি।  

জননকোষ বা গ্যামিট (Reproductive Cell or Gamete) : যৌন প্রজননের জন্য ডিপ্লয়েড জীবের জননাঙ্গে মায়োসিস প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হ্যাপ্লয়েড কোষকে জননকোষ বলে। জননকোষ সর্বদাই হ্যাপ্লয়েড। উদাহরণ : শুক্রাণু ও ডিম্বাণু।

আদিকেন্দ্রিক বা প্রাক-কেন্দ্রিক কোষ (Prokaryotic Cell) : যে কোষে কোনো আবরণীবেষ্টিত নিউক্লিয়াস, এমনকি আবরণীবেষ্টিত (membrane-bound) অন্য কোনো অঙ্গাণুও (organelles) থাকে না তা হলো আদি কোষ। উদাহরণ : মাইকোপ্লাজমা, ব্যাকটেরিয়া, ও সায়ানোব্যাকটেরিয়া।

প্রকৃত বা সুকেন্দ্রিক কোষ (Eukaryotic Cell) : যে কোষে আবরণীবেষ্টিত নিউক্লিয়াস থাকে তা হলো প্রকৃত কোষ। প্রকৃত কোষে নিউক্লিয়াস ছাড়াও আবরণীবেষ্টিত অন্যান্য অঙ্গাণু থাকে। জড় কোষপ্রাচীর বিশিষ্ট প্রকৃত কোষই প্রকৃত উদ্ভিদকোষ। শৈবাল, ছত্রাক, বায়োফাইটস, জিমনোস্পার্মস এবং এনজিওস্পার্মস ইত্যাদি সব উদ্ভিদই প্রকৃত কোষ দিয়ে গঠিত এবং সকল প্রাণিকোষ প্রকৃত কোষ।

উদ্ভিদকোষ (Plant Cell) : কোষের বাইরে শক্ত সেলুলোজ নির্মিত কোষ প্রাচীর থাকে। পরিণত কোষে কেন্দ্রে বড় কোষ গহ্বর ও সাইটোপ্লাজমে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। পরিণত কোষের গঠন সাধারণত গোলাকার, ডিম্বাকার হয়ে থাকে। সঞ্চিত খাদ্য শ্বেতসার। সাধারণত সেন্ট্রোসোম থাকে না।

প্রাণিকোষ (Animal Cell) : এদের কোষে কোষপ্রাচীর থাকে না এবং কোষ গহ্বর অনুপস্থিত, থাকলেও অতি ক্ষুদ্রাকৃতির, ক্লোরোপ্লাস্ট অনুপস্থিত। কোষে সেন্ট্রোসোম থাকে। সঞ্চিত খাদ্য চর্বি ও গ্লাইকোজেন।

📌 সর্বশেষ ৫ টি ব্লগ পড়ুন:

Scroll to Top