বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমের একাল-সেকাল!

নিজে মাধ্যমিকের পাট চুকিয়েছি বেশ কয়েক বছর আগে। তাই এখন শ্রেণিকক্ষে কেমন পাঠদান চলছে, তা জানার জন্য ফেসবুক আর পত্রিকাই একমাত্র ভরসা। ইদানীং ফেসবুকে ঢুকলেই দেখি, বাংলাদেশের নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বেশ তুলকালাম কাণ্ড চলছে। সাথে তো অভিভাবক আর শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছেই। খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন আসে, হুট করে নতুন কারিকুলাম কেন? আর এইটা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর কেমন প্রভাব পড়বে? আপনাদের মনেও নিশ্চয়ই এমন প্রশ্ন আসে? তাহলে চলুন, এই পরিবর্তন সম্পর্কে আরেকটু ভালো করে জানা যাক!

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা গত কয়েক বছর ধরে বেশ অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার পর ২০১০ সালের আগ পর্যন্ত, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল অনেকটা মুখস্থনির্ভর। এতে করে শিক্ষার্থীদের মেধা সঠিকভাবে যাচাইকরণের কোনো সুযোগ ছিল না। তাই মুখস্থনির্ভর পড়াশুনার পরিবর্তে, শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মেধা যাচাই করার লক্ষ্যে ২০০৮ সালে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে যুগোপযোগী ও বাস্তবসম্মত শিক্ষা ব্যাবস্থা চালু করার লক্ষ্যে ২০১০ সালে মাধ্যমিক স্তরে চালু করা হয়েছিল ‘সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি’। সৃজনশীল পদ্ধতি বলতে মূলত মূল পাঠ্য বইয়ের যে বিষয় রয়েছে সেখান থেকে প্রশ্ন না করে তারই মূল ভাবের আলোকে জ্ঞানমূলক, অনুধাবন মুলক, প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা এই ৪ টি ধাপে প্রশ্ন করাকে বোঝায়। তখন ধারণা করা হয়েছিল যে এই পদ্ধতিতে নোট-গাইড বই থাকবে না, মুখস্থ নির্ভর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু ফল হয়েছে ঠিক তার উল্টো। শিক্ষার্থীরা নতুন এই শিক্ষাক্রমের সাথে তাল মেলানোর জন্য আরো বেশি বেশি গৎবাঁধা নোট ও গাইডবইয়ের দারস্থ হতে থাকে। অভিভাবকদের মতে, সৃজনশীল পদ্ধতি ভালো হলেও এর প্রয়োগ ঠিকভাবে হচ্ছিল না। 

রিসার্চ ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব কমপ্লিট এডুকেশন (রেইস) শীর্ষক জরিপে জানানো হয়, মোট শিক্ষার্থীর এক-চতুর্থাংশই পরীক্ষার প্রশ্ন বুঝতে অক্ষম এবং তাদের কাছে কঠিন মনে হয় বিশেষত গণিত ও ইংরেজির মতো বিষয়। আরো বলা হয়, শিক্ষার্থীদের ৯২ শতাংশই গাইড বইনির্ভর। ওদের দুই-তৃতীয়াংশ সৃজনশীল পদ্ধতি বোঝার জন্য গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিচ্ছে। অন্যদিকে সব শিক্ষকদের সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে খুব একটা ধারনাই নেই। আবার যারা বুঝতে সক্ষম, সেসব শিক্ষকের অর্ধেক পড়ানোর জন্য গাইড বইয়ের দারস্থ হয়ে থাকেন।  

নিচের চার্টে কত শতাংশ শিক্ষকের সৃজনশীল পদ্ধতি নিয়ে ধারনা আছে তার একটা চিত্র তুলে ধরা হলো-

points scored | বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমের

ছবি: Points Scored

সৃজনশীল পদ্ধতিকে জ্ঞান, অনুধাবন প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতা– মোট চার ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। প্রতি প্রশ্নের মোট নম্বর ১০। যদি জ্ঞান ও অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর সঠিক হয়, তাহলে নম্বর কাটার কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে প্রয়োগ ও উচ্চতর দক্ষতার প্রশ্নের উত্তর সঠিক হলে সেখানেও নম্বর কাটা কঠিন। এই কারণে একজন পরীক্ষার্থী ১০ নম্বরের মধ্যে ৮ বা ৯ নম্বর পেয়েই যায়। যার কারণে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে পাশের হার কিংবা জিপিএ ৫ এর হারটাও দিন দিন বৃদ্ধি পেলেও, শিক্ষার মান বাড়ছিল না। কারণ একজন শিক্ষার্থী ক্লাসে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে না পারলেও, সে পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে ভালো গ্রেড পাচ্ছে৷ যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে এসব মেধাবী শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগই নাকানিচুবানি খাচ্ছিল। 

এই ২০১২ সালের প্রবর্তিত বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে বিদ্যালয়গুলোতে কাজে লাগানো যায়নি দেখে শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। কারণ শিক্ষার্থীদের মুখস্থ বিদ্যায় নিরুৎসাহিত করা ও গাইড নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হলেও এর কোনটি ঠেকানো সম্ভব হয়নি। যার কারণে অভিভাবক থেকে শুরু করে শিক্ষাবিদ, সবার মনেই প্রশ্ন জেগেছে, সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি কি আদৌ সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটিয়ে শিক্ষিত প্রজন্ম গড়ে তুলতে সাহায্য করছে? নাকি এই শিক্ষা ব্যবস্থা ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে?

উপরন্তু, আমাদের দেশে এই যে জিপিএ ৫ পাওয়ার ঢল নেমেছে, এর অন্যতম কারণ এই সৃজনশীল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন। একটু ভেঙ্গেই বলি।

গ্রেডিং পদ্ধতি আসার আগে প্রতি বোর্ডে মাত্র ২০ জন স্ট্যান্ড করতো। সেখানে ২০১৪ সালের পর থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের সংখ্যা কখনো লাখের নিচে নামেনি। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক অর্থাৎ এইচএসসিতে  জিপিএ-৫ এর সংখ্যা অর্ধেকেরও কম হয়ে যায়। আর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ২০% শিক্ষার্থী পাশই করতে পারে না। এর জন্য দায়ী করা হয় জিপিএ ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থাকে। কারণ মাধ্যমিকে থাকতে শিক্ষার্থীরা না বুঝে যা মুখস্থ করে এসেছিল, তার কোনো কিছুই উচ্চমাধ্যমিকের এডভান্সড পড়াশোনায় কাজে আসে না। ফলে ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্যের সংখ্যাটাই বেশি হয়। পার্থক্যটা যে কত বেশি, তা নিচের টেবিল থেকেই বোঝা যাবে-

২০১৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর হার২০১৬ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর হার২০১৬-১৭ সেশনের ঢাবি ঘ ইউনিটে পাশের হার
১,৪২‌,২৭৬ জন৪৮,৯৫০ জন৯.৮৩%
২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর হার২০১৭  সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এর হার২০১৭-১৮ সেশনের ঢাবি ঘ ইউনিটে পাশের হার
১,১১,৯০১ জন৩৩,২৪২ জন১৪.৩৫% 
এই পরিসংখ্যান দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলছে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা। কিন্তু দিনশেষে শিক্ষার্থীরা আসলে কিছুই শিখছে না।

পুরোনো শিক্ষাক্রমের ভালো-মন্দ নিয়ে তো জানা হলোই, এবার প্রস্তাবিত অর্থাৎ নতুন শিক্ষাক্রম  সম্পর্কে জানা যাক। আগেই বলেছি, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বেশ বড় রকমের একটা পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাবে। এই শিক্ষাব্যবস্থা রূপান্তরের মূল কারণ হলো ভবিষ্যতের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে শিক্ষার্থীকে দক্ষ করে তোলা। একটি দেশের শিক্ষার্থীরা তখনই দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হবে, যখন তাদের সমস্যা নিরূপণ ও সমাধানের দক্ষতা বাড়বে। যখন তারা দলগত কাজের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান করবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে, গত জানুয়ারি থেকে ১ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। আগামী বছর ২য়, ৩য়, ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে তা শুরু হবে। এরপর ২০২৫ সালে ৪র্থ, ৫ম ও ১০ম শ্রেণিতে চালু হবে। উচ্চমাধ্যমিকে একাদশ শ্রেণিতে ২০২৬ সালে ও দ্বাদশ শ্রেণিতে ২০২৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে।

এনসিটিবি (NCTB) জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকেই অভিন্ন ১০টি বিষয় পড়তে হবে। তবে শ্রেণি অনুযায়ী বিষয়গুলোর আধেয়তে তারতম্য থাকবে। ভলিউমও কমবেশি হবে। বিষয়গুলো হলো— বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান (বিজ্ঞান অনুশীলন বই ও বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ নামে দুটি বই), ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন বই, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, জীবন ও জীবিকা, শিল্প ও সংস্কৃতি এবং ধর্ম (চার ধর্মের জন্য পৃথক চারটি বই)। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে বিষয়ে ভিন্নতা চলে আসবে। তখন বাংলা, ইংরেজি ও সমন্বিত আরেকটি বিষয় সব শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে। বাকি চারটি (তিনটি নৈর্বাচনিক ও একটি ঐচ্ছিক) শিক্ষার্থীরা পছন্দ অনুযায়ী বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে। নতুন শিক্ষাক্রমে এখনকার মতো নম্বরের ব্যবস্থা নেই। ওয়েটেজ বা ভর দিয়ে বিবেচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি ও সমন্বিত বিষয়ে ভর মাধ্যমিক স্তরের চেয়ে কম থাকবে। বেশি গুরুত্ব পাবে নিজ নিজ বিভাগের বা বিশেষায়িত বিষয়গুলো। এর মধ্যে বিশেষায়িত বিষয়গুলোর জন্য মোট ভরের তিন–চতুর্থাংশ এবং এক–চতুর্থাংশ আবশ্যিক বিষয়ের জন্য বরাদ্দ থাকবে। সেভাবে বিষয় বিন্যাস ও পরিসর সাজানো হবে।

বুকিংস রিপোর্ট (২০১৬) অন স্কিলস ফর চেঞ্জিং ওয়ার্ল্ড’ এ দেখা যায়, ১০২টি দেশের মধ্যে ৭৬টি দেশের শিক্ষাক্রমে সুনির্দিষ্টভাবে দক্ষতাভিত্তিক যোগ্যতাকে নির্ধারণ করা হয়েছে এবং ৫১টি দেশের শিক্ষাক্রম সম্পূর্ণ রূপান্তরমূলক দক্ষতাভিত্তিক করা হয়েছে। এই কারণে একইভাবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটের সাথে তাল মেলানোর জন্য বাংলাদেশের শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আনার জন্য তাগিদ অনুভব করে।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের শিখন যোগ্যতা অর্জনের ক্ষেত্রে কতটা অগ্রসর হয়েছে, তা ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বৃত্ত ইত্যাদি সূচকের মাধ্যমে ট্রান্সক্রিপ্টে উল্লেখ করা হচ্ছে। নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। এছাড়া আগে যেমন নবম শ্রেণিতে থাকতে বিভাগ নির্বাচনের সুযোগ ছিল, এবার সেই সুযোগটা থাকছে না। এর বদলে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবেন। এখন পরীক্ষার চেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর শিখনকালীন মূল্যায়ন বা ধারাবাহিক মূল্যায়নকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের দক্ষতা, উপস্থাপন, ক্লাস অ্যাসাইনমেন্ট বা বাড়ির কাজসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমে যা থাকছে, তার সবই আমাদের কাছে একদমই নতুন। তবে এই পরিবর্তিত শিক্ষাক্রমের উল্লেখযোগ্য ৪টি পরিবর্তন হলো:

  1. অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পদ্ধতি (Experiential learning method)
  2. শিক্ষকদের পরিবর্তিত ভূমিকা (Role changes of a teacher)
  3. যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম (Competency based learning)
  4. আনন্দদায়ক এবং শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক পাঠ্যক্রম (Joyful and learner-centered curriculum) 

নতুন শিক্ষাক্রমে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পদ্ধতির কথা বলা হয়েছে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পদ্ধতির ধারণাটি অভিনব এবং পৃথিবীর খুব অল্পসংখ্যক দেশেই এটি চালু রয়েছে। এই শিক্ষাক্রম এমনভাবে নকশা করা হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থী বাস্তব জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে এবং অর্জিত শিক্ষাকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারে। এই শিক্ষাক্রমের আওতায় শিক্ষার্থীরা কেবল শিখেই যাবে না, বরং বাস্তব জীবনেও এই শিক্ষাগুলোকে কাজে লাগাবে। যেমন পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমগুলোর মাধ্যমে তারা কী করে নিজ বিবেচনায় কোনোকিছু করতে হয়, একটা জটিল সমস্যার সমাধান বের করে আনতে হয়, নিজ মূল্যায়নে কোনো কিছুর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হয়, তা সবই শিখবে। 

learning cycle kolb

ছবি: Kolb’s Learning Styles And Experiential Learning Cycle [Source: simplypsychology]

Experiential learning method মানে হলো অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা। এই মেথডের কনসেপ্টটা কিন্তু বেশ পুরোনো৷ ১৮৪১ সালে ডেভিড ক্লব এই থিওরিটা প্রবর্তিত করেন। এই কনসেপ্টের মূলমন্ত্র হলো “Learning by doing”। অর্থাৎ করতে করতে শেখা। আমরা পাঁচ-ছয় বছর আগে, মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বইগুলোতে নানান এক্সপেরিমেন্টের কথা দেখতে পাই। কিন্তু এরমধ্যে কয়টা আপনি নিজ হাতে করেছেন? সবগুলো নিশ্চয়ই করেননি? হতে পারে আপনার শিক্ষক আপনাকে সবগুলো করা শেখাননি। কিংবা এই পরীক্ষাগুলো করতে যেসব উপাদানের দরকার, তা হয়তো আপনার কাছে ছিলই না। কিন্তু এই Experiential learning method-এ আপনাকে অবশ্যই সব কাজ নিজ হাতে করে দেখাতে হবে। কেবল বইতে কিভাবে নিজের চারপাশের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হয়, তা জানলেই হবে না। বরং শিক্ষককে পরিষ্কার করে দেখাতে হবে। আগে আমরা কেবল একটা ফরম্যাট ধরে ঐকিক নিয়ম করে যেতাম। যেমন ১টা আপেলের দাম দেওয়া আছে। তাহলে তিনটা আপেলের দাম কত সেটা বের করতে হলে ১টার দামের সাথে ৩ দিয়ে গুণ দিবো। ব্যস, এতটুকুই আমরা পুরোনো কারিকুলামে শিখতাম কিন্তু এটাতে আমরা কি নিজে থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিয়েছি? বা বাস্তব জীবনেই বা এর কী প্রয়োগ? পুরো ব্যাপারটা আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য আমরা টেন মিনিট স্কুলের ওয়েবসাইট থেকে ছোট্ট একটা গেম খেলে আসি। এই গেমটাতে experiential learning এর যেই চারটা ধাপ- জ্ঞান, দক্ষতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ রয়েছে, সেগুলোর প্রয়োগ সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারনা পাবো।

এখানে যেমন বলা হয়েছে নিলয়কে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে সে প্যাকেটজাত আপেল কিনবে, নাকি খোলা আপেল কিনবে? কোনটা তার জন্য বেশি লাভজনক? তো শিক্ষার্থী তার মতো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে। এরপর তাকে একটা ঐকিক নিয়মের অংক দেওয়ার মাধ্যমে দেখা হয় সে সঠিক সমীকরণটা বের করতে পারে নাকি৷ এভাবে তার জ্ঞানের অংশটা শেষ করে দক্ষতার অংশ প্রয়োগ করছে৷ অর্থাৎ আমি শুধু আপেলের দামই বের করছি না, বরং মার্কেটে যেয়ে আপেল কিনতে পারছি কিনা সেটা দেখছি এরপর দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ অংশে দেখা যাবে আপাত সিদ্ধান্ত সবাই নিবে প্যাকেটজাত আপেল কেনাটাই লাভজনক। কিন্তু টাকার হিসেবে দেখা যাবে খোলা আপেল কেনা বেশি সাশ্রয়ী। এভাবে কিন্তু সে মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া শিখছে হচ্ছে। সে বুঝতে পারছে যে বাস্তব জীবনেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে। সেক্ষেত্রে আবারও পুরো প্রক্রিয়াটার প্রতিটি ধাপ আবার যাচাই-বাছাই করতে হবে।  আর এই জীবনমুখী শিক্ষার কারণেই শ্রেণিকক্ষে experiential learning আসছে। 

এরপরে চলে আসে শিক্ষকের ভূমিকা পরিবর্তন। আগে একজন শিক্ষককে কেবল একটি বিষয়ে পারদর্শী হলেই হতো। যেমন বাংলার শিক্ষক কেবল বাংলাই পড়াতেন আর গণিতের শিক্ষক গণিত। তারা তাদের সারা বছরের সিলেবাসও সেভাবেই গোছাতেন। অর্থাৎ আগে একজন শিক্ষকের কেবল বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান থাকলেই হতো৷ কিন্তু এখন শিক্ষককে নির্ধারিত বিষয়ে জ্ঞান দেওয়ার পাশাপাশি একজন ফ্যাসিলিটেটর, অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের শিখন সহায়তাকারী হিসেবেও ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনিও শিক্ষার্থীদের সাথে কো-লার্নার হিসেবে কারিকুলামের নানান বিষয় শিখবেন। বরং প্রয়োজনে শিক্ষককে হতে হবে গ্রুপ এসাইন্টমেন্ট এবং একক এসাইন্টমেন্ট এর ফ্যাসিলেটর। মূল্যায়ন উৎসব এর আগে পুরো সময় ধরে তাকে একজন চৌকস এবং সৎ স্ট্যান্ডার্ড সেটার বা মূল্যায়নকারী হতে হবে৷ আর পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য নিজেকে একজন কড়া কোচ হিসেবে তৈরি করতে হবে। তাকে সাব্জেক্ট এক্সপার্ট হয়ে ওঠার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এবং তাকে নমনীয়ভাবে শিক্ষার্থীদের সামনে নিজেকে তুলে ধরতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা তাকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতে যেয়ে ভয় না পায়। 

Competency based learning-এ কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। এবারের নতুন সংস্করণের প্রত্যেকটা বই ঘাঁটালে দেখবেন প্রত্যেকটা বই এর শুরুতে কিছু competency বা যোগ্যতার উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ নতুন কারিকুলাম চায় আমরা শিক্ষার্থীরা একটা বই পড়ার পর উল্লেখিত যোগ্যতাগুলো অর্জন করব। 

অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষায় শুধু ভুলগুলো খুঁজে বের করা হয় না; তা সমাধানের চেষ্টাও করা হয়। সবার সঙ্গে একত্রে কাজ করছেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন, সমাধান খুঁজছেন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনারা একে অন্যের কাছ থেকে শিখছেন। একটি দলে কাজ করা আপনাকে মূল্যবান দক্ষতা শেখায় যেমন যোগাযোগ, সহযোগিতা এবং সমস্যা সমাধান। এগুলো শুধু ‘স্কুল স্কিল’ নয়, এগুলো এমন জীবনদক্ষতা যা আপনাকে যেকোনো চাকরি বা পরিস্থিতিতে সফল হতে সাহায্য করবে। এ বিষয়গুলোই নতুন কারিকুলামের ভালো গুণ।

এই শিক্ষাব্যবস্থা কিন্তু বাংলাদেশেই প্রথম না। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, ফিনল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া তাদের শিক্ষাক্রমকে এভাবে সাজিয়ে নিয়েছে।  

তাছাড়া আমরা যদি একটু সুদূর ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করি, আগামী বিশ্বে টিকে থাকতে হলে, জিপিএ-৫ এর চেয়ে আপনার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা কতটুকু, সৃজনশীলতা বা সমস্যা সমাধানের দক্ষতা আছে নাকি নেই– এগুলো বেশি দেখা হবে। কারণ যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, আমরা যদি নিজেকে আগের মতো মুখস্থবিদ্যার মধ্যেই আটকে রাখি, তাহলে প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে আমাদের শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই টিকে থাকতে পারবে না। আপনি যদি কখনো কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বা জটিল পরিস্থিতিতে পড়েন, তাহলে আপনাকে এই সমস্যা সামাল দেওয়ার দক্ষতাটা অর্জন করতেই হবে। আর এই দক্ষতার মাঝে সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা, অনুধাবনের ক্ষমতা, গবেষণার দক্ষতা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা, যোগাযোগ দক্ষতা, দলগত কাজ করার দক্ষতাসহ অনেক কিছু চলেই আসে। তাই বুঝতেই পারছেন যে experiential learning এর ব্যাপারটা বেশ চিন্তা করেই নেওয়া হয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় ভয়টা হলো, আমাদের দেশে এই শিক্ষাব্যবস্থা ঠিকমতো চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক আছে নাকি নেই। তার উপর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত বেশি। এছাড়া আমাদের শিখন উপকরণের অপর্যাপ্ততাও রয়েছে। তবে আশার ব্যাপার হলো যে নতুন শিক্ষাক্রমে শ্রেণি শিক্ষকদের ১২ দফা নির্দেশনা পালন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে গতানুগতিক শিক্ষককেন্দ্রিক পদ্ধতির বদলে শিক্ষার্থীদের সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করা, ‘হোম ভিজিট’ ও উঠান বৈঠক করা এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করা। এসব ছাড়াও শিক্ষকদের জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। শিক্ষকের কাজই হবে শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষার জগতটা তৈরি করে দেওয়া। নতুন শিক্ষাক্রম এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন শিক্ষার্থীরা আনন্দের মধ্যে শিক্ষার জগৎটাকে খুঁজে নিতে পারে।

এই শিক্ষাক্রমের একটা বড় সুবিধা হলো এখানের মূল্যায়ন ব্যবস্থা ও আগের মূল্যায়ন ব্যবস্থা এক নয়৷ ফলে গতানুগতিক গাইড বই শিক্ষার্থীদের কোনো সুবিধা দেবে না। তার উপর শিক্ষার্থীকে নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকতেই হবে। কারণ শিক্ষার্থী কতটুকু শিখল, তা নিয়মিত ক্লাসে যাচাই করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীর দুর্বলতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে। এই সহযোগিতার কাজটি করবেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক কিংবা বিষয়-সংশ্লিষ্ট যে কোনো ব্যক্তি। এতে করে শ্রেণিকক্ষে এবং শ্রেণিকক্ষের বাইরে শিক্ষার আনন্দময় পরিবেশ তৈরি হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিখতে চাওয়ার আগ্রহও বাড়ছে। তাছাড়া প্রত্যেকটি বই মুখস্থনির্ভর থেকে রিসোর্সবুকে পরিণত হবে। এতে পাঠের তথ্য শিক্ষার্থীরা কিভাবে সংগ্রহ করবে তা উল্লেখ আছে। শিক্ষকরা আগের মতো মুখস্থ পড়া নিবেন না। আবার শেখার জন্য শিশুকে নোট-গাইডের ওপর নির্ভর করতে হবে না। এর পরিবর্তে তারা নিজের সহপাঠী, পরিবার ও সমাজ থেকে শিখবে। শিক্ষক শুধু এখানে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে অভিভাবকদের একাংশের দাবি, নতুন এ ব্যবস্থায় বিজ্ঞান সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ প্রসঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন যে নতুন এই ব্যবস্থার ফলে দেশে বিজ্ঞানমনস্কতা বাড়বে। বর্তমানে মাধ্যমিকে মাত্র ১৯ শতাংশের মতো শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে এই হার আরও কমে যায়। নতুন শিক্ষাক্রমে ১০ম শ্রেণির সব শিক্ষার্থী বিজ্ঞানের বিষয়গুলোও পড়ার সুযোগ পাবে। এর মানে হলো, শতভাগ শিক্ষার্থীর মধ্যেই বিজ্ঞানের প্রসারতা বাড়বে। 

আরেকটা সমস্যা হচ্ছে শিক্ষকদের নিয়ে। তাঁরা এই শিক্ষাক্রম ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারছেন না। তাঁরা অভিযোগ করছেন, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ঠিকমতো হচ্ছে না। এমনকি সময়মতো শিক্ষক সহায়িকাও তাঁদের হাতে আসছে না। এই শিক্ষাক্রমে পাঠদান প্রক্রিয়াতেও আমূল পরিবর্তন এসেছে। আগের মতো কেবল শিখন-শেখানো কার্যক্রমের মধ্যে প্রক্রিয়াটি সীমিত নয়। শ্রেণি কার্যক্রমের ওই চারটি ধাপ যদি শিক্ষকেরা না বুঝেন, তাহলে ক্লাস নেওয়া অসম্ভব। তবে এসবের মধ্যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই আশার আলো দেখছেন। তাদের মতে এই শিক্ষাক্রম আনন্দময় পড়ার পরিবেশ তৈরি করবে। মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখনকে অগ্রাধিকার দিবে। যেহেতু রেজাল্ট কার্ডে নম্বর বা গ্রেডের পরিবর্তে শিক্ষার্থীর পারদর্শিতার বিস্তারিত বিবরণ থাকবে, তাই কেউ অসুস্থ প্রতিযোগিতা বা তুলনাতেও মেতে থাকবে না৷ 

নতুন শিক্ষাক্রম কেবল জ্ঞান বা জানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সেখানে থাকবে অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ। তাই তারা আরও মনে করেন, এই শিক্ষাক্রম নতুন শতকের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে সম্পর্কিত হবে। একইসাথে ধনী, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, গ্রামীণ-শহুরে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, সুবিধাবঞ্চিত সকল শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষাক্রমে সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে। দক্ষতা, জ্ঞান, দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধের সমন্বয়ে শিক্ষার্থীরা আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। 

  • শিক্ষানীতি হলো আগামীর শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে তার একটি নীতি প্রণয়ন করাকে বোঝায়।  আর জাতীয় শিক্ষানীতি হলো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধন ও মানোন্নয়নের জন্য একটি সুগঠিত কাঠামো প্রণয়ন নীতি। প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষানীতি থাকে যেখানে রাষ্ট্রের ভবিষ্যত শিক্ষা ব্যবস্থা কী হবে, কেমন হবে তার একটি নীতি নির্ধারণ বর্ণনা করা হয়। প্রতি বছর শিক্ষানীতির অনেক কিছু পরিবর্তন, পরিবর্ধন হচ্ছে। যেহেতু, শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিস্থিতির আলোকে পরিবর্তন হচ্ছে।
  • অন্যদিকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুবিন্যস্ত পরিকল্পনাকে বলা হয় শিক্ষাক্রম। কোনো একটি শিক্ষা কার্যক্রম কী উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কী বিষয়বস্তুর মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জিত হবে; কখন, কীভাবে, কার সহায়তায় এবং কী উপকরণের সাহায্যে তা বাস্তবায়িত হবে, শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে এসবের যাবতীয় পরিকল্পনার রূপরেখাকে শিক্ষাক্রম বলে। অর্থাৎ বলা যায় এইটা একটি পরীক্ষামূলক ব্যবস্থা।

আর এই কারণেই নতুন শিক্ষাব্যবস্থাকে আমরা শিক্ষানীতি না বলে শিক্ষাক্রম বলছি, যেহেতু এইটা এখনো পরীক্ষালব্ধ অবস্থায় আছে।

  • নতুন শিক্ষাক্রমের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য, শিক্ষাবোর্ড থেকে শিক্ষকদের জন্য বিশেষ ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ তাছাড়া বইয়ের কন্টেন্ট স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় বই পড়েই দলগতভাবে এসাইনমেন্টগুলো করা যাবে। 
  • নির্দিষ্ট অ্যাপসের মাধ্যমে মূল্যায়ন করার কাজ শুরু হবে। ফলে ধারাবাহিক রেকর্ড রাখার কষ্ট কমে যাবে। যেসব টুলস শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে, তাতে মূল্যায়ন ব্যবস্থার খুব স্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। একজন শিক্ষার্থীকে চাইলেই চতুর্ভুজ দেওয়া সম্ভব নয়। কয়েকটি সূচকের মাত্রা মিলিয়ে সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে। মূল্যায়ন অ্যাপে শিক্ষকদের এদিক-সেদিক করার সুযোগ নেই। 
  • অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষায় শিক্ষার্থী শুধু বইয়ের কন্টেন্ট মুখস্থ করে না, বরং বইয়ের দুই মলাটের মাঝ থেকে বের হয়ে চারপাশ থেকেও অনেককিছু শিখবে৷ 

তথ্যসূত্র: 
Scroll to Top